ALL Bangla Post

শিশুদের মলদ্বারে গুড়া কৃমি হাওয়া কারণ লক্ষণ সমাধান A to Z

গুড়া কৃমি সম্পর্কে বিস্তারিত নিম্নে আলোচনা করা হল-

Worms /কৃমি :- কৃমি হলো একটি পরজীবী প্রাণী এটি মানুষের শরীরে বাসা বেঁধে তাদের শরীরকে ধ্বংস করে দেয় এবং তাদেরই খাদ্য খেয়ে জীবন যাপন করে। কৃমি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে ,তবে আমাদের দেশে সাধারণত যেগুলো বেশি পাওয়া যায় সেগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল।

কেঁচো কৃমি

এগুলো দেখলে অনেকেই সাধারণত ভয় পায়। দেখতে সাপের মত, কেঁচোর মতো কিন্তু এর গায়ের কালার হালকা হলুদ বা সাদা হয়ে থাকে। এই গুলো মানুষের পেটের ভিতরে বিভিন্ন রকমের ক্ষতি করে থাকে।

এটি লম্বায় হয় 6 থেকে 12 ইঞ্চি। সংক্রমণ যুক্ত খাদ্য দ্রব্য হজম প্রক্রিয়ার মাধ্যম থেকে এ কৃমি গুলো রক্তের মাধ্যমে ফুসফুস, লিভার ও হৃদপিণ্ডে পৌঁছায়।

তারপরে ফুসফুসের পর্দার ভেদ করে স্টোমাকে পৌঁছায় সেখান থেকে লার্জ ইনটেস্টাইন এবং স্মল ইন্টেসটাইন এ পৌঁছিয়ে ডিম পাড়ে সেখান থেকে পরিপূর্ণভাবে বেড়ে ওঠে। নষ্ট করে দেয় মানুষের শরীরের বিভিন্ন রকমের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।

Pin Worms গুড়া কৃমি

Pin worms / সুতা কৃমি

শিশুদের মলদ্বারে গুড়া কৃমি হাওয়া এই পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের কৃমি থাকলেও সবচেয়ে বেশি যেটি মানবদেহে বাসা বাঁধে সেটি হল গুরা কৃমি। এটি আকারে অতিক্ষুদ্র হলেও এর ক্ষতিকরের মাত্রা খুবই বেশি।

ইহা লম্বায় 2 থেকে 10  মিলিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এগুলো দেখতে কিছুটা সুতোর মতো তাই কোন কোন স্থানে সুতা কৃমি বলে। এই গুড়া কৃমি রাতের বেলায় শিশুদের বা যেকোনো কারো মলদ্বারে এসে ডিম পাড়ে। তখন মলদ্বার চুলকায় এবং অতিরিক্ত চুলকানির কারণে মলদ্বারে ক্ষত হয়ে যায়।

অনেক সময় রক্ত বের হয়ে।সুতা কৃমি এমনই একটি পরজীবী প্রাণী ছোট বাচ্চাদের যৌনাঙ্গে প্রবেশ করতে পারে এবং সেখানেও ইনফেকশন জাতীয় সমস্যা তৈরি করে ,যার ফলে শিশুরা যৌনাঙ্গ চুলকাতে থাকে।

আক্রান্ত স্থানে হাত দিয়ে চুলকালে হাতের আঙ্গুলের নখের বিতর ওই জীবাণু লেগে থাকে। পুনরায় সেই হাত দিয়ে কোন কিছু সেবন করলে বা নাকে, মুখে হাত নিলে খাবার-দাবারের মাধ্যমে পেটে চলে যায়।

সেখান থেকে আবার এর উৎপত্তি হয়। গুড়া কৃমির ডিম পাড়ে ঐগুলো ফুটে বাচ্চা হয়। ইহাতে ছড়িয়ে পড়ে মলদ্বারের আনাচে-কানাচে।একেবারে শিশুদের বিশেষ করে রাত্রে বেলায় মলদ্বারে অনেকগুলো একত্রিত হয় চাকা বেঁধে কামড়ানো শুরু করে।

বক্র কৃমি বা hook worm

ইহার নামের সাথে তাদের শরীরের কৃমির মিল পাওয়া যায় যেমন হুক ওয়ার্ম- বরশির মত চারটি দাঁত হুকের মাধ্যমে রক্ত চুষে থাকে।প্রতিদিন একটি বক্রকৃমি এভারেজ 0.2 মিলি রক্ত খায়। এই বক্রকৃমিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে লক্ষণটি মানবদেহে দেখা যায় সেটি হল রক্তস্বল্পতা। যেহেতু প্রতিদিন এদের প্রধান খাদ্য হলো রক্ত তাই রক্তের ঘাটতি দেখা দেয়। যার কারণে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।

হালকা সবুজ ,সাদা রঙের দৈর্ঘ্য 2 থেকে 6 ইঞ্চি হয়ে। বক্র কৃমির ডিম স্টোমাক থেকে মল হয়ে বেরিয়ে আসে এবং বাহিরে এসে ঘাসে   স্যাঁতস্যাঁতে স্থানে সংক্রমণ বা লাভায়ে পরিণত হয়। সেইগুলি আবার হাঁটাচলার মাধ্যমে পায়ের পাতা ছিদ্র করে রক্তের মাধ্যমে ফুসফুস ,হূৎপিণ্ড ,লিভার অতিক্রম করে Stomach এ পৌঁছায়। সেখান থেকে ডিম হয় বাচ্চা পরিস্ফুটিত হয়। এভাবেই বংশবৃদ্ধি করতে থাকে এবং মানুষের শরীরের রক্ত খেয়ে তাদের শরীরকে হৃষ্টপুষ্ট করে।

ফিতা কৃমি

এ কৃমির সাথে মিল রয়েছে তার নামের সাথে। কেননা ফিতার মতোই লম্বায় 5 থেকে 25 ফুটর ও বেশি হয়ে থাকে। ইহার মাথার সাথে অনেকগুলো খন্ড। যাহার দেহগুলি একটির সাথে আরেকটি মিলে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একটিমাত্র ফিতাকৃমি পাওয়া যায় পেটের ভিতর, কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষ বেশিও থাকতে পারে। ফিতে কৃমি ক্ষুদ্রতন্ত্র থেকে ডিম পারে সেখান থেকে মলের মাধ্যমে বেরিয়ে এসে লাভায়ে পরিণত হয়।

সেগুলো ঘাস লতাপাতার মাধ্যমে লেগে গরু, মহিষ ,ছাগল ,ভেড়ায়ে এইগুলো খেয়ে থাকে।পরিপাকতন্ত্রের মাধ্যমে হজম হয় মাংসে রূপান্তরিত হয়। সেগুলো আমরা যদি অল্প সেদ্ধ করে সেবন করি তাহলে আমাদের শরীরে এই জীবাণু গুলি ঢুকে যায় এবং আমাদের শরীরকে ক্ষতিগ্রস্থ করে এর মাধ্যমে সাধারণত মাথা ব্যাথা ,খিঁচুনি মানসিক পরিবর্তন ইত্যাদি রোগে দেখা দেয়।

শিশুদের মলদ্বারে গুড়া কৃমি হাওয়া এর কারণ

যেভাবে ছড়ায় এই কৃমি-

বাথরুমে বা পায়খানা

বাথরুমের ভিতরে এবং আশেপাশে খালিপায়ে চলাফেরা করলে কৃমির লাভা পায়ের সাথে মিশে গিয়ে শরীরে প্রবেশ করে।  তাই বাথরুম পয়নিস্কাশন একান্ত প্রয়োজন এবং জুতো পায় দিয়ে বাথরুমে প্রবেশ করুন।

খালে ডোবায় নদীতে

বাথরুমের পাইপ খালে বিলে বা নদীর সাথে মিল করে দেওয়া হয়। যার কারণে মালগুলি পানিতে ভেসে বেড়ায় এবং সেই পানি দূষিত হয় জীবাণু তৈরি হয়।  আবার সেই পানি দিয়ে খাবার রান্না করি ,সবজিতে ব্যবহার করি। এমনকি সকল প্রকার ধৌত করা কাজে ব্যবহার করি এ থেকে কৃমি ছড়িয়ে যায়।

যেখানে সেখানে মলত্যাগ

গ্রাম অঞ্চলের শিশুদের বেশি বেশি দেখা যায় ঘরের যেখানে সেখানে বাথরুম করে এবং সেই মলগুলি হাত দিয়ে ধরে। কোন কোন ক্ষেত্রে মুখে নিয়ে থাকে। কিন্তু তাদের গার্জিয়ান খেয়াল রাখেনা বাচ্চারা কি করতেছে?এই অসচেতনতার জন্য বাচ্চার কৃমি জনিত সমস্যায় ভুগে।

অপরিষ্কার স্থানের শাক-সবজি

অপরিষ্কার স্থানে শাক-সব্জির চাষাবাদ করলে সেখান থেকে কৃমির লাভা উৎপন্ন হতে পারে।

গুড়া কৃমি হাওয়ার লক্ষণ

  • শ্বাস-প্রশ্বাসে দুর্গন্ধ :-মুখে ঘা বা অন্য কোন কারণে মুখ থেকে দুর্গন্ধ হতে পারে। তবে কৃমি অতিরিক্ত বেড়ে গেলেও মুখ থেকে দুর্গন্ধ আসে। 
  • পেট ফাঁপা ,বদহজম ,পাতলা পায়খানা,
  • মলে আম মিশ্রিত

শিশুদের মলদ্বারে গুড়া কৃমি হাওয়ার ক্ষতি

মিউকাস বের হওয়া: কৃমির অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার ফলে পেটের ভিতর পেঁচিয়ে যায়। পেটের ভিতর সেগুলোই কামড়িয়ে জমা করে ,যার ফলে পেটে ব্যথা হয় এবং বাথরুমের  মলের সাথে বের হয় যায়। তবে মিউকাস গুলি চাকা চাকা হয়ে বাথরুমের রাস্তা থেকে বেরিয়ে আসে এবং সেগুলির বিতর কৃমি গুলি সাঁতরাতে থাকে।

অপুষ্টি: এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে বাচ্চারা সঠিক সময়ে বেড়ে ওঠে না। মনে হয় যেন রোগাসোগা। যতই খাবার খেয়ে থাকে, তাতে স্বাস্থ্য হয় না। শরীর রুগ্ন হয়ে থাকে। অরুচি / খেতে না চাওয়া: শরীরে কৃমির উৎপাত বেড়ে গেলে বাচ্চারা সঠিকভাবে খেতে চায় না। জ্ঞান জ্ঞান করে এবং রাগান্বিত হয় যাহা কিছু পায় সামনে পায় তাহা ফেলে দেয়। দাঁত কিড়মিড় করে বেশিরভাগ সময়ই। মলদ্বার থেকে রক্ত পড়া: শিশুদের মলদ্বারে গুড়া কৃমি হাওয়া বা মলের সাথে ,মিউকাস এর সাথে রক্ত বের হতে পারে যদি  গুড়া কৃমি বেড়ে যায়। বমি ও পাতলা পায়খানা: কৃমির সংক্রমণ হঠাৎ করে বেড়ে গেলে বমি আসতে পারে এবং সাথে পাতলা পায়খানা সহ জ্বর আসতে পারে।

রক্তস্বল্পতা: বাচ্চাদের রক্তস্বল্পতা হতে পারে কেননা মলের সাথে মিউকাস বা রক্ত বের হয়ে যায়।  কিছু কৃমি আছে যাহারা শরীর থেকে রক্ত খেয়ে জীবন যাপন করে।

ঘন ঘন শিশুদের মলদ্বারে গুড়া কৃমি হাওয়া কারণ

শিশুদের ঘনঘন কৃমি হওয়ার প্রধান কারণ হলো সঠিক নিয়মে ঔষধ খাওয়ানো হয় না। এবং যে কারণে কৃমির লক্ষণ দেখা যায় এই কারণগুলি না মানলে।

ডাক্তারের কাছে আপনাদের কখন যাওয়া উচিত:

যখনই কোন কৃমির লক্ষণ দেখা যাবে সাথেসাথে শিশু বিশেষজ্ঞ বা অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের কাছে শরণাপন্ন হওয়া উচিত।  কেননা কৃমি একটি জটিল ব্যাধি যেকোনো সময় শরীরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে। অভিজ্ঞ ডাক্তার ছাড়া মেডিসিন সঠিক নিয়মে সেবন করা যায় না।  তাই অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

বাচ্চাদের কৃমি হলে কি খাওয়া উচিত: জীবাণুমুক্ত টাটকা শাকসবজি ফলমূল বিশেষ করে ভিটামিন সি যুক্ত সিজনাল ফল।

শিশুদের মলদ্বারে গুড়া কৃমি হাওয়া দূর করতে করণীয়

  • সারাদিনে তিন থেকে চার বার বাচ্চাদের হাত-পা সাবান দিয়ে পরিষ্কার করা।
  • বাচ্চাদের খাবার-দাবার গুলি পরিষ্কার স্থানে রাখা।
  • প্রসাব পায়খানা করলে সাথে সাথে পরিষ্কার করা এবং শুকনো জামা কাপড় পরানো।
  • যে কোন ফল খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। 
  • হাতের আঙ্গুলের নখ কিছুদিন পরপর বেড়ে গেলে ,কেটে ছোট করে দিতে হবে।
  • পাকা ঘর হলে ঘরের মেজ ভালো করে সার্ফ-এক্সেল দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
  • বাজার থেকে চকলেট বা ফাস্টফুড জাতীয় খাদ্য খাওয়ানো বন্ধ রাখতে হবে।

আরো জানুন: হোমিও ওষুধের নাম ও কাজ, চিকিৎসা, খাওয়ার নিয়ম।

Please subscribe to my channel and follow

Facebook Page

YouTube