বিভিন্ন রোগের জন্য নির্ধারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা: একটি বিস্তারিত ধারণা

রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগের কারণ, তীব্রতা এবং চিকিৎসার কার্যকারিতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। নিচে কয়েকটি সাধারণ রোগ এবং সেগুলোর জন্য নির্ধারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

Table of Contents

১. ডায়াবেটিস (Diabetes):

ডায়াবেটিস একটি বিপাকীয় রোগ, যেখানে শরীরের ইনসুলিন উৎপাদন বা ব্যবহারে সমস্যা হয়, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়।

  • ফাস্টিং ব্লাড সুগার (FBS): ৮-১০ ঘণ্টা উপবাসের পর রক্তে শর্করার মাত্রা পরিমাপ করা হয়। স্বাভাবিক মাত্রা ৭০-৯৯ mg/dL।
  • পোস্টপ্রান্ডিয়াল ব্লাড সুগার (PPBS): খাবার গ্রহণের ২ ঘণ্টা পর রক্তে শর্করার মাত্রা পরিমাপ করা হয়। স্বাভাবিক মাত্রা ১৪০ mg/dL-এর নিচে।
  • ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট (OGTT): প্রথমে ফাস্টিং সুগার পরিমাপ করা হয়, এরপর রোগীকে ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ দ্রবণ খাইয়ে ১ ও ২ ঘণ্টা পর রক্তে শর্করার মাত্রা দেখা হয়। এটি গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নির্ণয়েও ব্যবহৃত হয়।
  • HbA1c: গত ২-৩ মাসের গড় রক্তে শর্করার মাত্রা নির্দেশ করে। ৫.৭% এর নিচে স্বাভাবিক, ৫.৭%-৬.৪% প্রি-ডায়াবেটিস এবং ৬.৫% বা তার বেশি হলে ডায়াবেটিস নির্দেশ করে।
  • ইউরিন সুগার ও কিটোন (Urine Sugar & Ketone): প্রস্রাবে শর্করা ও কিটোন বডির উপস্থিতি ডায়াবেটিসের জটিলতা নির্দেশ করতে পারে।

২. উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension):

উচ্চ রক্তচাপ একটি নীরব ঘাতক, যা হৃদরোগ, স্ট্রোক ও কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

  • ব্লাড প্রেসার পরিমাপ: নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাপ করা হয়। সিস্টোলিক (উপরের) চাপ ১৪০ mmHg বা তার বেশি এবং ডায়াস্টোলিক (নিচের) চাপ ৯০ mmHg বা তার বেশি হলে উচ্চ রক্তচাপ ধরা হয়।
  • ইসিজি (ECG/EKG): হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ রেকর্ড করে। এটি হৃদপিণ্ডের অস্বাভাবিকতা, যেমন – এনলার্জমেন্ট বা ইসকেমিয়া শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
  • ইকোকার্ডিওগ্রাম (Echocardiogram): আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহার করে হৃদপিণ্ডের গঠন ও কার্যকারিতা দেখা হয়। এটি হৃদপিণ্ডের পেশীর পুরুত্ব, ভালভের অবস্থা ও পাম্প করার ক্ষমতা মূল্যায়ন করে।
  • কিডনি ফাংশন টেস্ট (KFT): রক্তে ক্রিয়েটিনিন ও ইউরিয়া পরিমাপ করে কিডনির কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। উচ্চ রক্তচাপ কিডনির ক্ষতি করতে পারে।
  • লিপিড প্রোফাইল (Lipid Profile): কোলেস্টেরল (LDL, HDL) এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা পরীক্ষা করা হয়। উচ্চ কোলেস্টেরল হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • চোখের রেটিনা পরীক্ষা (Fundoscopy): উচ্চ রক্তচাপ রেটিনার রক্তনালীকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

৩. থাইরয়েড রোগ (Thyroid Disease):

  • টিএসএইচ (TSH): থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন। এটি থাইরয়েডের কার্যকারিতা মূল্যায়নে সবচেয়ে সংবেদনশীল পরীক্ষা। উচ্চ TSH হাইপোথাইরয়েডিজম (অ্যালসীয় থাইরয়েড) এবং নিম্ন TSH হাইপারথাইরয়েডিজম (অতি সক্রিয় থাইরয়েড) নির্দেশ করে।
  • T3 এবং T4 (Free T3 & Free T4): থাইরয়েড গ্রন্থি দ্বারা উৎপাদিত প্রধান হরমোন। এইগুলোর মাত্রা থাইরয়েডের প্রকৃত অবস্থা জানতে সাহায্য করে।
  • থাইরয়েড অ্যান্টিবডি টেস্ট (Thyroid Antibody Test): হাশিমোটো থাইরয়েডাইটিস বা গ্রেভস রোগের মতো অটোইমিউন থাইরয়েড রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করে।
  • আল্ট্রাসনোগ্রাফি অফ থাইরয়েড (USG Thyroid): থাইরয়েড গ্রন্থির আকার, গঠন এবং সিস্ট বা টিউমারের উপস্থিতি পরীক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়।

৪. লিভার রোগ (Liver Disease):

লিভার শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা অসংখ্য বিপাকীয় কার্য সম্পাদন করে।

লিভার ফাংশন টেস্ট (LFT):

  • এসজিপিটি (SGPT/ALT) ও এসজিওটি (SGOT/AST): এই এনজাইমগুলো লিভারের কোষের ক্ষতির নির্দেশক।
  • বিলিরুবিন (Bilirubin): জন্ডিসের কারণ নির্ণয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
  • অ্যালবুমিন (Albumin): লিভারের প্রোটিন সংশ্লেষণ ক্ষমতা নির্দেশ করে।
  • অ্যালকালাইন ফসফেটেজ (ALP) ও জিজিটি (GGT): পিত্তনালীর সমস্যা বা লিভারের অন্যান্য রোগের নির্দেশক।

হেপাটাইটিস প্যানেল: হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি, ই ভাইরাসের উপস্থিতি নির্ণয়ে রক্ত পরীক্ষা।
আল্ট্রাসনোগ্রাফি অফ অ্যাবডোমেন (USG Abdomen): লিভারের আকার, গঠন, সিস্ট, টিউমার, ফ্যাটি লিভার বা সিরোসিসের মতো পরিবর্তন দেখতে সাহায্য করে।
ফাইব্রোস্ক্যান (Fibroscan): লিভারের ফাইব্রোসিস বা সিরোসিসের মাত্রা পরিমাপের জন্য একটি নন-ইনভেসিভ পরীক্ষা।
বায়োপসি (Biopsy): কিছু ক্ষেত্রে লিভারের টিস্যুর নমুনা নিয়ে মাইক্রোস্কোপের নিচে পরীক্ষা করা হয় সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য।

৫. কিডনি রোগ (Kidney Disease):

কিডনি রক্ত পরিশোধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কিডনি ফাংশন টেস্ট (KFT):

  • ক্রিয়েটিনিন (Creatinine): কিডনির কার্যকারিতার একটি নির্ভরযোগ্য নির্দেশক।
  • ইউরিয়া (Urea): রক্তে ইউরিয়ার মাত্রা বৃদ্ধি কিডনি সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
  • ইজিএফআর (eGFR): এস্টিমেটেড গ্লোমেরুলার ফিল্ট্রেশন রেট, যা কিডনির রক্ত পরিস্রাবণ ক্ষমতা নির্দেশ করে।

ইউরিন রুটিন অ্যান্ড মাইক্রোস্কোপিক এক্সামিনেশন (Urine R/M/E): প্রস্রাবে প্রোটিন, রক্তকণিকা, শর্করা বা অন্যান্য অস্বাভাবিক উপাদান পরীক্ষা করা হয়।
ইউরিন মাইক্রো-অ্যালবুমিন (Urine Microalbumin): প্রস্রাবে অ্যালবুমিনের ক্ষুদ্র পরিমাণ উপস্থিতি প্রাথমিক কিডনি রোগের লক্ষণ।
আল্ট্রাসনোগ্রাফি অফ কেইউবি (USG KUB): কিডনি, ইউরেটার ও ব্লাডারের আকার, গঠন, পাথর বা সিস্ট দেখতে ব্যবহৃত হয়।
রেনাল অ্যাঞ্জিওগ্রাফি (Renal Angiography): কিডনির রক্তনালীর অবস্থা দেখতে ব্যবহৃত হয়।
কিডনি বায়োপসি (Kidney Biopsy): কিডনির টিস্যুর নমুনা পরীক্ষা করে রোগের সঠিক কারণ নির্ণয় করা হয়।

৬. হৃদরোগ (Heart Disease):

হৃদরোগ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন – করোনারি ধমনী রোগ, হার্ট ফেইলিউর, অ্যারিথমিয়া ইত্যাদি।

ইসিজি (ECG/EKG): হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ রেকর্ড করে, যা হার্ট অ্যাটাক, অ্যারিথমিয়া বা ইসকেমিয়া নির্ণয়ে সহায়ক।
ইকোকার্ডিওগ্রাম (Echocardiogram): হৃদপিণ্ডের গঠন, পাম্প করার ক্ষমতা ও ভালভের অবস্থা মূল্যায়ন করে।
টিএমটি (TMT/Stress Test): ট্রেডমিল এক্সারসাইজ টেস্ট, যেখানে ব্যায়ামের সময় হৃদপিণ্ডের প্রতিক্রিয়া এবং রক্তপ্রবাহ দেখা হয়।
হোল্টার মনিটর (Holter Monitor): ২৪-৪৮ ঘণ্টার জন্য হৃদপিণ্ডের কার্যকলাপ রেকর্ড করা হয়, যা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন (Arrhythmia) নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়।
করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাম (Coronary Angiogram): হৃদপিণ্ডের রক্তনালীতে কোনো ব্লক বা সংকীর্ণতা আছে কিনা তা দেখতে একটি এক্স-রে পরীক্ষা।
লিপিড প্রোফাইল (Lipid Profile): কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড পরীক্ষা, যা হৃদরোগের ঝুঁকির কারণ।
সিবিসি (CBC): কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট, রক্তশূন্যতা হৃদপিণ্ডে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
ট্রোপোনিন টেস্ট (Troponin Test): হার্ট অ্যাটাকের পর রক্তে ট্রোপোনিন নামক প্রোটিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।

৭. রক্তশূন্যতা (Anemia):

রক্তে হিমোগ্লোবিন বা লোহিত রক্তকণিকার পরিমাণ কমে গেলে রক্তশূন্যতা হয়।

কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (CBC):

  • হিমোগ্লোবিন (Hb): রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা পরিমাপ।
  • আরবিসি কাউন্ট (RBC Count): লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা।
  • এমসিভি (MCV), এমসিএইচ (MCH), এমসিএইচসি (MCHC): লোহিত রক্তকণিকার আকার ও হিমোগ্লোবিন ঘনত্ব।

সেরাম ফেরিটিন (Serum Ferritin): শরীরে আয়রনের সঞ্চয় নির্দেশ করে। আয়রনের অভাবে রক্তশূন্যতা নির্ণয়ে এটি গুরুত্বপূর্ণ।
সেরাম আয়রন (Serum Iron) ও টিআইবিসি (TIBC): রক্তে আয়রনের মাত্রা ও আয়রন পরিবহনের ক্ষমতা নির্দেশ করে।
ভিটামিন বি১২ এবং ফোলেট লেভেল (Vitamin B12 & Folate Level): এই ভিটামিনগুলোর অভাবেও রক্তশূন্যতা হতে পারে (মেগালোব্লাস্টিক অ্যানিমিয়া)।
স্টুল ওকুল্ট ব্লাড টেস্ট (Stool Occult Blood Test): পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণ হচ্ছে কিনা তা দেখতে ব্যবহৃত হয়।
বোন ম্যারো বায়োপসি (Bone Marrow Biopsy): কিছু জটিল রক্তশূন্যতার ক্ষেত্রে অস্থিমজ্জার অবস্থা দেখতে ব্যবহৃত হয়।

৮. ক্যান্সার (Cancer):

ক্যান্সার নির্ণয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন হয়, যা ক্যান্সারের ধরন ও অবস্থান ভেদে ভিন্ন হয়।

  • বায়োপসি (Biopsy): সন্দেহজনক টিস্যুর নমুনা নিয়ে মাইক্রোস্কোপের নিচে পরীক্ষা করা ক্যান্সারের চূড়ান্ত নির্ণায়ক।

ব্লাড টেস্ট:

  • টিউমার মার্কার (Tumor Markers): কিছু নির্দিষ্ট প্রোটিন বা হরমোনের মাত্রা (যেমন: PSA for prostate cancer, CA-125 for ovarian cancer) ক্যান্সারের উপস্থিতি বা চিকিৎসার কার্যকারিতা নির্দেশ করতে পারে।
  • CBC: রক্তশূন্যতা বা সংক্রমণের উপস্থিতি দেখা যেতে পারে।

ইমেজিং টেস্ট:

  • এক্স-রে (X-Ray): ফুসফুস বা হাড়ের অস্বাভাবিকতা দেখতে।
  • আল্ট্রাসনোগ্রাফি (USG): বিভিন্ন অঙ্গের গঠন দেখতে, যেমন – লিভার, কিডনি, স্তন।
  • সিটি স্ক্যান (CT Scan): শরীরের বিভিন্ন অংশের বিস্তারিত ছবি প্রদান করে।
  • এমআরআই (MRI): সফট টিস্যু, যেমন – ব্রেন, স্পাইন বা লিভারের বিস্তারিত চিত্র পেতে।
  • পিইটি স্ক্যান (PET Scan): শরীরের কোন অংশে ক্যান্সার কোষ সক্রিয় আছে তা চিহ্নিত করতে।

এন্ডোস্কোপি/কলোনোস্কোপি (Endoscopy/Colonoscopy): খাদ্যনালী বা কোলনের ভেতরের অবস্থা দেখতে এবং বায়োপসি নিতে ব্যবহৃত হয়।
ম্যামোগ্রাফি (Mammography): স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়।
প্যাপ স্মিয়ার (Pap Smear): জরায়ুমুখের ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়।

৯. সংক্রমণ (Infections):

সংক্রমণ নির্ণয়ে রোগের কারণ (ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস) ও সংক্রমণের স্থান নির্ধারণ করা হয়।

  • কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (CBC): শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা (WBC Count) ও ডিফারেনশিয়াল কাউন্ট (DLC) সংক্রমণ নির্দেশ করতে পারে।
  • সি-রিয়্যাক্টিভ প্রোটিন (CRP) ও ইএসআর (ESR): প্রদাহের নির্দেশক।
  • কালচার টেস্ট (Culture Test): রক্ত, প্রস্রাব, কফ বা অন্যান্য শারীরিক ফ্লুইড থেকে নমুনা নিয়ে জীবাণু সনাক্ত করা হয় এবং তাদের প্রতি সংবেদনশীল অ্যান্টিবায়োটিক পরীক্ষা করা হয় (Sensitivity Test)।
  • সেরোলজি টেস্ট (Serology Test): নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডি বা অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করে ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ নির্ণয় করা হয় (যেমন: টাইফয়েডের জন্য ওয়াইডাল টেস্ট, ডেঙ্গু NS1 অ্যান্টিজেন, HCV/HBV অ্যান্টিবডি)।
  • পিসিআর (PCR): পলিমেয়ার চেইন রিঅ্যাকশন, যা ভাইরাসের জেনেটিক উপাদান (যেমন: কোভিড-১৯, এইচআইভি) সনাক্ত করতে অত্যন্ত সংবেদনশীল।
  • মাইক্রোস্কোপিক এক্সামিনেশন (Microscopic Examination): মল, প্রস্রাব বা কফ পরীক্ষা করে পরজীবী বা জীবাণু সনাক্ত করা।

১০. অস্থিসন্ধির রোগ (Arthritis):

অস্থিসন্ধির প্রদাহজনিত রোগ।

  • সি-রিয়্যাক্টিভ প্রোটিন (CRP) ও ইএসআর (ESR): প্রদাহের নির্দেশক।
  • রিউমাটয়েড ফ্যাক্টর (RF) ও অ্যান্টি-সিসিপি (Anti-CCP): রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়।
  • ইউরিক অ্যাসিড (Uric Acid): রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের উচ্চ মাত্রা গাউট (Gout) রোগ নির্দেশ করে।
  • এএনএ (ANA): অ্যান্টি-নিউক্লিয়ার অ্যান্টিবডি, সিস্টেমিক লুপাস এরিথেমাটোসাস (SLE) এর মতো অটোইমিউন রোগ নির্ণয়ে সহায়ক।
  • জয়েন্ট এক্স-রে (Joint X-Ray): জয়েন্টের ক্ষয় বা অন্যান্য পরিবর্তন দেখতে।
  • আর্থ্রোসেন্টেসিস (Arthrocentesis): জয়েন্ট ফ্লুইড নিয়ে পরীক্ষা করা হয়।

১১. অ্যাজমা (Asthma) ও সিওপিডি (COPD):

এগুলো ফুসফুসের শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত রোগ।

  • স্পাইরোমেট্রি (Spirometry): এটি ফুসফুসের কার্যকারিতা পরিমাপের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এটি ফুসফুস কতটা বাতাস ধারণ করতে পারে এবং কতটা দ্রুত বাতাস বের করতে পারে তা পরিমাপ করে। অ্যাজমা এবং সিওপিডি নির্ণয় ও রোগের তীব্রতা পর্যবেক্ষণে এটি ব্যবহৃত হয়।
  • বুক এক্স-রে (Chest X-Ray): ফুসফুসের অবস্থা, নিউমোনিয়া বা অন্যান্য সমস্যা যা শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে তা দেখতে সাহায্য করে। সিওপিডি-তে ফুসফুসের অতিরিক্ত স্ফীতি (hyperinflation) দেখা যেতে পারে।
  • আর্টেরিয়াল ব্লাড গ্যাস (ABG): রক্তে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা পরিমাপ করে ফুসফুসের গ্যাস বিনিময়ের ক্ষমতা মূল্যায়ন করা হয়। গুরুতর অ্যাজমা অ্যাটাক বা সিওপিডি-এর তীব্রতা নির্ণয়ে এটি সহায়ক।
  • অ্যালার্জি টেস্ট (Allergy Tests): অ্যাজমা রোগীদের ক্ষেত্রে কোন অ্যালার্জেন (যেমন: ধুলো, পরাগ) শ্বাসকষ্টের কারণ তা জানতে স্কিন প্রিক টেস্ট বা রক্ত পরীক্ষা করা হয়।
  • সিটি স্ক্যান অফ চেস্ট (CT Scan of Chest): সিওপিডি-এর ক্ষেত্রে ফুসফুসের এম্ফিসেমা বা ব্রঙ্কিয়েকটেসিসের মতো জটিলতা দেখতে সিটি স্ক্যান করা হয়।

১২. অস্টিওপোরোসিস (Osteoporosis):

এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায়, ফলে হাড় ভাঙার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

  • বিএমডি (BMD) বা ডেক্সা স্ক্যান (DEXA Scan): এটি হাড়ের ঘনত্ব পরিমাপের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা। এটি সাধারণত মেরুদণ্ড ও নিতম্বের হাড়ের ঘনত্ব পরিমাপ করে।

রক্ত পরীক্ষা:

  • ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস (Calcium & Phosphorus): রক্তে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের মাত্রা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  • ভিটামিন ডি লেভেল (Vitamin D Level): ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়তা করে, তাই এর অভাব অস্টিওপোরোসিসের কারণ হতে পারে।
  • পিটিএইচ (PTH – Parathyroid Hormone): এই হরমোন রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

এক্স-রে (X-Ray): হাড়ের ফ্র্যাকচার বা ভাঙন দেখতে ব্যবহৃত হয়। তবে, এক্স-রেতে হাড়ের ক্ষয় দেখা যেতে শুরু করলে সাধারণত প্রায় ৩০% হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়।

১৩. স্ট্রোক (Stroke):

মস্তিষ্কের রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হলে স্ট্রোক হয়, যা মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতি করে।

  • সিটি স্ক্যান অফ ব্রেন (CT Scan of Brain): এটি স্ট্রোক নির্ণয়ের জন্য প্রথম ও দ্রুততম পরীক্ষা। এটি ইস্কেমিক স্ট্রোক (রক্তনালীতে ব্লক) এবং হেমোরেজিক স্ট্রোক (রক্তপাত) এর মধ্যে পার্থক্য করতে সাহায্য করে।
  • এমআরআই অফ ব্রেন (MRI of Brain): সিটি স্ক্যানের চেয়ে আরও বিস্তারিত চিত্র প্রদান করে এবং ছোট ইস্কেমিক স্ট্রোক বা দীর্ঘস্থায়ী ইস্কেমিয়া সনাক্ত করতে পারে।
  • ডপলার আল্ট্রাসনোগ্রাফি অফ ক্যারোটিড আর্টারি (Doppler Ultrasonography of Carotid Artery): ক্যারোটিড ধমনীতে (যা মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ করে) কোনো ব্লক বা সংকীর্ণতা আছে কিনা তা দেখতে ব্যবহৃত হয়।
  • ইসিজি (ECG/EKG): হৃদপিণ্ডের অস্বাভাবিকতা, যেমন অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন, যা স্ট্রোকের কারণ হতে পারে, তা দেখতে।
  • ইকোকার্ডিওগ্রাম (Echocardiogram): হৃদপিণ্ডে রক্ত জমাট বাঁধার কোনো উৎস আছে কিনা তা দেখতে।
  • লিপিড প্রোফাইল (Lipid Profile) ও ব্লাড সুগার (Blood Sugar): স্ট্রোকের ঝুঁকির কারণগুলো (উচ্চ কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস) মূল্যায়ন করতে।

১৪. আলসার (Ulcer) ও গ্যাস্ট্রাইটিস (Gastritis):

এগুলো পরিপাকতন্ত্রের প্রদাহ বা ক্ষতজনিত সমস্যা।

  • এন্ডোস্কোপি (Endoscopy/Upper GI Endoscopy): এটি আলসার এবং গ্যাস্ট্রাইটিস নির্ণয়ের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি। একটি পাতলা, নমনীয় টিউব ক্যামেরা সহ খাদ্যনালী, পাকস্থলী ও ডিওডেনামের ভেতরের অংশ পরীক্ষা করে। প্রয়োজনে বায়োপসিও নেওয়া হয়।

Helicobacter pylori (H. pylori) test:

  • ইউরিয়া ব্রেথ টেস্ট (Urea Breath Test): H. pylori নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ আছে কিনা তা দেখতে।
  • স্টুল অ্যান্টিজেন টেস্ট (Stool Antigen Test): মলে H. pylori অ্যান্টিজেনের উপস্থিতি।
  • বায়োপসি ইউরিয়াজ টেস্ট (Biopsy Urease Test – RUT): এন্ডোস্কোপির সময় সংগৃহীত টিস্যুর নমুনা পরীক্ষা।

স্টুল ওকুল্ট ব্লাড টেস্ট (Stool Occult Blood Test): যদি আলসার থেকে রক্তক্ষরণ হয়, তাহলে মলে রক্ত থাকতে পারে, যা এই পরীক্ষার মাধ্যমে সনাক্ত করা হয়।
ব্লাড টেস্ট (CBC): রক্তক্ষরণের কারণে রক্তশূন্যতা হয়েছে কিনা তা দেখতে।

১৫. ইউটিআই (UTI – Urinary Tract Infection):

এটি মূত্রনালীর সংক্রমণ।

  • ইউরিন রুটিন অ্যান্ড মাইক্রোস্কোপিক এক্সামিনেশন (Urine R/M/E): প্রস্রাবে শ্বেত রক্তকণিকা (pus cells), লোহিত রক্তকণিকা, ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য অস্বাভাবিক উপাদান পরীক্ষা করা হয়।
  • ইউরিন কালচার অ্যান্ড সেন্সিটিভিটি টেস্ট (Urine Culture & Sensitivity Test): প্রস্রাবের নমুনায় কোন ধরনের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ঘটিয়েছে তা সনাক্ত করা হয় এবং কোন অ্যান্টিবায়োটিক সেই ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর তা নির্ধারণ করা হয়।
  • রেনাল আল্ট্রাসনোগ্রাফি (Renal Ultrasonography): যদি বারবার ইউটিআই হয় বা কিডনিতে সংক্রমণের সন্দেহ থাকে, তবে কিডনি ও মূত্রনালীর গঠনগত সমস্যা, পাথর বা ব্লকেজ দেখতে এই পরীক্ষা করা হয়।

১৬. পাইলস (Piles/Hemorrhoids) ও ফিসার (Fissure):

এগুলো মলদ্বারের সমস্যা।

শারীরিক পরীক্ষা (Physical Examination): চিকিৎসক মলদ্বারের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন (ডিজিটাল রেক্টাল এক্সামিনেশন – DRE)।
প্রক্টোস্কোপি (Proctoscopy/Anoscopy): একটি ছোট, আলোকিত যন্ত্র মলদ্বারের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে পাইলস বা ফিসার দেখা হয়।
সিগময়েডোস্কোপি (Sigmoidoscopy) বা কলোনোস্কোপি (Colonoscopy): যদি রক্তপাতের কারণ নিশ্চিত না হয় বা অন্যান্য গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যার সন্দেহ থাকে, তাহলে কোলনের ভেতরের অংশ পরীক্ষা করার জন্য এই পরীক্ষাগুলো করা হয়।

১৭. গ্লুকোমা (Glaucoma):

চোখের একটি গুরুতর রোগ যা অপটিক নার্ভের ক্ষতির কারণে দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিতে পারে।

  • টোনোমেট্রি (Tonometry): চোখের ভেতরের চাপ (Intraocular Pressure – IOP) পরিমাপ করা হয়। উচ্চ IOP গ্লুকোমার প্রধান লক্ষণ।
  • অফথালমোস্কোপি (Ophthalmoscopy): অপটিক নার্ভের অবস্থা পরীক্ষা করা হয়। গ্লুকোমার কারণে অপটিক নার্ভের ক্ষতি হয়।
  • ভিজ্যুয়াল ফিল্ড টেস্ট (Visual Field Test): রোগীর দৃষ্টিশক্তির পরিসীমা (পেরিপেরাল ভিশন) পরীক্ষা করা হয়। গ্লুকোমা প্রাথমিকভাবে পার্শ্ব দৃষ্টিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
  • অপ্টিক্যাল কোহেরেন্স টোমোগ্রাফি (OCT): রেটিনাল নার্ভ ফাইবার লেয়ারের পুরুত্ব পরিমাপ করে অপটিক নার্ভের ক্ষতির মাত্রা মূল্যায়ন করা হয়।

১৮. মাইগ্রেন ও অন্যান্য মাথাব্যথা (Migraine and Other Headaches):

মাথাব্যথার কারণ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা প্রয়োজন হতে পারে।

  • শারীরিক পরীক্ষা ও নিউরোলজিক্যাল ইভালুয়েশন: চিকিৎসক রোগীর ইতিহাস, মাথাব্যথার ধরন এবং স্নায়বিক লক্ষণগুলি পরীক্ষা করেন।
  • সিটি স্ক্যান অফ ব্রেন (CT Scan of Brain): যদি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, টিউমার, সংক্রমণ বা স্ট্রোকের মতো গুরুতর কারণ সন্দেহ করা হয়, তবে এটি দ্রুত রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করে।
  • এমআরআই অফ ব্রেন (MRI of Brain): মস্তিষ্কের আরও বিস্তারিত চিত্র প্রদান করে, যা টিউমার, এনইউরিজম, স্ট্রোক বা মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসের মতো কারণ নির্ণয়ে সহায়ক হতে পারে। মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে সাধারণত এমআরআই স্বাভাবিক থাকে, তবে অন্যান্য কারণ বাদ দেওয়ার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।
  • লাম্বার পাংচার (Lumbar Puncture/Spinal Tap): যদি মেনিনজাইটিস (মস্তিষ্ক ও সুষুম্না কাণ্ডের আবরণের প্রদাহ) বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ সন্দেহ করা হয় (যখন সিটি স্ক্যানে দেখা যায় না), তখন সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড (CSF) পরীক্ষা করা হয়।
  • ইইজি (EEG – Electroencephalogram): যদি খিঁচুনি বা মৃগীরোগের সাথে মাথাব্যথা যুক্ত থাকে, তাহলে মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ রেকর্ড করার জন্য এটি ব্যবহৃত হতে পারে।

১৯. এপিলেপসি বা মৃগীরোগ (Epilepsy):

এটি মস্তিষ্কের একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যা বারবার খিঁচুনি ঘটায়।

  • ইইজি (EEG – Electroencephalogram): এটি এপিলেপসি নির্ণয়ের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এটি মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ রেকর্ড করে এবং অস্বাভাবিক প্যাটার্ন সনাক্ত করে যা খিঁচুনি নির্দেশ করে।
  • এমআরআই অফ ব্রেন (MRI of Brain): মস্তিষ্কে টিউমার, আঘাত, স্ট্রোক বা অন্যান্য গঠনগত অস্বাভাবিকতা আছে কিনা তা দেখতে, যা খিঁচুনির কারণ হতে পারে।
  • সিটি স্ক্যান অফ ব্রেন (CT Scan of Brain): মস্তিষ্কের গঠনগত সমস্যা বা রক্তপাতের মতো জরুরি অবস্থা নির্ণয়ে ব্যবহৃত হতে পারে।
  • ব্লাড টেস্ট: খিঁচুনির অন্যান্য কারণ, যেমন – ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা, রক্তে শর্করার পরিবর্তন, কিডনি বা লিভারের সমস্যা বাদ দেওয়ার জন্য করা হয়। জেনেটিক টেস্টিংও কিছু ক্ষেত্রে করা হতে পারে।

২০. অ্যালার্জি (Allergies):

শরীরের ইমিউন সিস্টেমের অতি-প্রতিক্রিয়া যা বিভিন্ন অ্যালার্জেন দ্বারা ঘটে।

  • স্কিন প্রিক টেস্ট (Skin Prick Test): অ্যালার্জেন (যেমন: পরাগ, ধুলো, প্রাণীর পশম, কিছু খাবার) ত্বকে প্রয়োগ করে প্রতিক্রিয়া দেখা হয়। এটি অ্যালার্জি নির্ণয়ের একটি দ্রুত এবং কার্যকর পদ্ধতি।
  • রক্ত পরীক্ষা (Blood Test – IgE Specific Antibodies): রক্তে নির্দিষ্ট অ্যালার্জেন-সম্পর্কিত IgE অ্যান্টিবডির মাত্রা পরিমাপ করা হয়। এটি RAST (Radioallergosorbent Test) বা ImmunoCAP নামেও পরিচিত।
  • প্যাচ টেস্ট (Patch Test): ত্বকে প্রয়োগ করা রাসায়নিক বা অন্যান্য পদার্থের প্রতি ত্বকের ধীরগতির প্রতিক্রিয়া (যেমন: কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস) দেখতে এটি ব্যবহৃত হয়।
  • এলিমিনেশন ডায়েট (Elimination Diet): খাদ্য অ্যালার্জি বা ইনটলারেন্স নির্ণয়ের জন্য সন্দেহজনক খাবার বাদ দিয়ে প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা হয়।
  • ব্রঙ্কিয়াল চ্যালেঞ্জ টেস্ট (Bronchial Challenge Test): অ্যাজমা রোগীদের ক্ষেত্রে শ্বাসনালী কতটা সংবেদনশীল তা জানতে কিছু নির্দিষ্ট রাসায়নিক (যেমন: মিথাকোলিন) শ্বাসের সাথে দিয়ে ফুসফুসের কার্যকারিতা পরিমাপ করা হয়।

২১. ডিপ্রেশন ও অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার (Depression & Anxiety Disorders):

এগুলি মানসিক স্বাস্থ্যগত অবস্থা।

  • সাইকোলজিক্যাল ইভালুয়েশন (Psychological Evaluation): একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা মনোবিজ্ঞানী রোগীর উপসর্গ, ব্যক্তিগত ইতিহাস, পারিবারিক ইতিহাস এবং জীবনযাত্রার ধরন সম্পর্কে বিস্তারিত প্রশ্ন করেন। নির্দিষ্ট প্রশ্নাবলী (যেমন: PHQ-9 for depression, GAD-7 for anxiety) ব্যবহার করা হয়।
  • শারীরিক পরীক্ষা (Physical Examination): ডিপ্রেশন বা অ্যাংজাইটির শারীরিক কারণ (যেমন: থাইরয়েড সমস্যা, ভিটামিনের অভাব) বাদ দেওয়ার জন্য করা হয়।

ব্লাড টেস্ট:

  • থাইরয়েড ফাংশন টেস্ট (Thyroid Function Test): হাইপোথাইরয়েডিজম ডিপ্রেশনের লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে।
  • ভিটামিন বি১২ এবং ভিটামিন ডি লেভেল (Vitamin B12 & Vitamin D Level): এই ভিটামিনগুলোর অভাব মেজাজ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
  • কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (CBC) ও ইলেক্ট্রোলাইট প্যানেল (Electrolyte Panel): শারীরিক স্বাস্থ্যের সাধারণ অবস্থা মূল্যায়নের জন্য।

২২. এসটিডি (STD – Sexually Transmitted Diseases):

যৌনবাহিত রোগ।

  • রক্ত পরীক্ষা (Blood Tests): এইচআইভি (HIV), সিফিলিস (Syphilis), হেপাটাইটিস বি (Hepatitis B), হেপাটাইটিস সি (Hepatitis C) এর জন্য অ্যান্টিবডি বা অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হয়।
  • ইউরিন টেস্ট (Urine Tests): ক্ল্যামিডিয়া (Chlamydia) ও গনোরিয়া (Gonorrhea) নির্ণয়ের জন্য প্রস্রাবের নমুনা পরীক্ষা করা হয়।

স্যাম্পল সোয়াব টেস্ট (Sample Swab Tests):

  • জেনিটাল সোয়াব (Genital Swab): জেনিটাল হার্পিস (Genital Herpes), গনোরিয়া, ক্ল্যামিডিয়া নির্ণয়ের জন্য ক্ষত বা মূত্রনালী থেকে নমুনা নেওয়া হয়।
  • ভ্যাজাইনাল সোয়াব (Vaginal Swab): নারীদের ক্ষেত্রে ট্রাইকোমোনিয়াসিস (Trichomoniasis), ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস বা ইস্ট ইনফেকশন নির্ণয়ে।
  • রেকটাল সোয়াব (Rectal Swab) ও থ্রোট সোয়াব (Throat Swab): যদি মলদ্বার বা গলায় সংক্রমণের সন্দেহ থাকে।

শারীরিক পরীক্ষা: জেনিটাল ওয়ার্টস (HPV), হার্পিস বা অন্যান্য দৃশ্যমান ক্ষত পরীক্ষা করা হয়।

২৩. কিডনি স্টোন (Kidney Stones):

কিডনি বা মূত্রনালীতে পাথরের উপস্থিতি।

  • ইউরিন রুটিন অ্যান্ড মাইক্রোস্কোপিক এক্সামিনেশন (Urine R/M/E): প্রস্রাবে রক্ত, পুঁজ বা ক্রিস্টালের উপস্থিতি দেখা যেতে পারে।
  • ইউরিন কালচার (Urine Culture): যদি সংক্রমণের সন্দেহ থাকে।
  • ব্লাড টেস্ট: রক্তে ক্রিয়েটিনিন (Creatinine), ইউরিয়া (Urea), ক্যালসিয়াম (Calcium) এবং ইউরিক অ্যাসিড (Uric Acid) এর মাত্রা পরীক্ষা করা হয়, যা পাথর গঠনের কারণ হতে পারে।
  • আল্ট্রাসনোগ্রাফি অফ কেইউবি (USG KUB): কিডনি, ইউরেটার ও ব্লাডারে পাথরের উপস্থিতি এবং এর কারণে কোনো ব্লকেজ বা কিডনির ফুলে যাওয়া (হাইড্রোনফ্রোসিস) আছে কিনা তা দেখতে এটি প্রাথমিক পরীক্ষা।
  • এক্স-রে কেইউবি (X-Ray KUB): অনেক পাথর এক্স-রেতে দৃশ্যমান হয়।
  • নন-কনট্রাস্ট সিটি কেইউবি (Non-Contrast CT KUB): পাথর নির্ণয়ের জন্য সবচেয়ে সংবেদনশীল পরীক্ষা, বিশেষ করে ছোট পাথর বা যে পাথরগুলো এক্স-রেতে দেখা যায় না।

২৪. রুবেওলা বা হাম (Measles):

একটি অত্যন্ত সংক্রামক ভাইরাল রোগ।

  • শারীরিক পরীক্ষা ও ক্লিনিক্যাল সিম্পটমস: নির্দিষ্ট ফুসকুড়ি, জ্বর, কাশি, সর্দি ও কনজাংটিভাইটিস দেখে প্রাথমিকভাবে রোগ নির্ণয় করা হয়।

রক্ত পরীক্ষা:

  • হাম IgM অ্যান্টিবডি টেস্ট (Measles IgM Antibody Test): সক্রিয় সংক্রমণ নির্ণয়ের জন্য রক্তে IgM অ্যান্টিবডির উপস্থিতি দেখা হয়।
  • হাম IgG অ্যান্টিবডি টেস্ট (Measles IgG Antibody Test): পূর্ববর্তী সংক্রমণ বা টিকা থেকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে কিনা তা জানতে IgG অ্যান্টিবডির মাত্রা পরিমাপ করা হয়।

২৫. ডেঙ্গু (Dengue Fever):

একটি মশা বাহিত ভাইরাল রোগ।

  • এনএস১ অ্যান্টিজেন টেস্ট (NS1 Antigen Test): জ্বরের প্রথম কয়েক দিনের মধ্যে ডেঙ্গু ভাইরাসের উপস্থিতি সনাক্ত করার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা।
  • ডেঙ্গু আইজিএম ও আইজিজি অ্যান্টিবডি টেস্ট (Dengue IgM & IgG Antibody Test): সাধারণত জ্বরের ৫-৭ দিন পর থেকে এই অ্যান্টিবডিগুলো রক্তে দেখা যায়, যা সংক্রমণের নিশ্চিতকরণে সহায়তা করে।
  • সিবিসি (CBC): ডেঙ্গু রোগীদের ক্ষেত্রে শ্বেত রক্তকণিকা (WBC) এবং অনুচক্রিকা (Platelet) সংখ্যা কমে যেতে পারে। এটি রোগের তীব্রতা পর্যবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ।
  • পিসিভি (PCV – Packed Cell Volume): যদি রোগীর প্লাজমা লিকেজ হয় (গুরুত্বপূর্ণ ডেঙ্গুর একটি লক্ষণ), তাহলে পিসিভি বেড়ে যেতে পারে।

মনে রাখবেন, এই পরীক্ষাগুলো কেবল একটি সাধারণ ধারণা। প্রতিটি রোগীর পরিস্থিতি ভিন্ন হয় এবং রোগের সঠিক নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য।

Translate »
error: Content is protected !!